এম রহিম. বাংলাদেশ থেকে

অবশেষে অনলাইনে পন্য বুকিং চালু হওয়ায় বাংলাদেশ ও ভারতের  মধ্যে আমদানি রফতানি বানিজ্যে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ  সরকারের নতুন নির্দেশনার পর থেকে  পেট্রাপোল বন্দরে সৃষ্ট অঘোষিত পার্কিং সিন্ডেকেট  (বেসরকারি পার্কিং সিস্টেম) উঠে গেছে।  মোটা অংকের  ক্ষয়ক্ষতি, সিমাহীন হয়রানি, অনিয়ম ও দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে আমদানি রফতানির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি এখান থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার আয় করছে কোটি কেটি টাকা। আর সন্মানজনক সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ ওভারতের ব্যবসায়িরা।

বেশ কিছুদিন থেকেই বেনাপোল পেট্টাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চালু হয়েছে অনলাইন বুকিং সিস্টেম।  কালিতলা সিন্ডিকেট বাজদের দৌরাত্ব্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল আমদানি রফতানির সাথে সম্পৃক্ত দু’দেশের ব্যবসায়ীরা। আমদানি রফতানি বানিজ্যে ভয়াবহ অনিয়ম ঠেকাতে রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ নিয়ে অবশেষে পণ্যবাহী ট্রাকের জন্য আগে থেকেই বুকিং সিস্টেম চালু করে, এতে করে পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে পৌছলেই অল্প সময়ের মধ্যেই তা ছাড়পত্র দিয়ে বন্দর থেকে ডিপার্চার করা হয়। রাজ্য সরকারের এই অভাবনীয় পদক্ষেপের ফলে ভারতের পেট্রাপোল ও বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে সুফল পেতে শুরু করেছেএই নয়া ব্যবস্থার সুবিধায়  ভারত থেকে পণ্যবাহি ট্রাক নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসা হরেন মন্ডল ও কাত্তিক দেবনাথ বলেন. আগে পণ্যবাহি ট্রাক নিয়ে দিনের পর দিন এমনকি মাসাধিকাল পর্যন্ত সিরিয়ালের নামে আটকে থাকতে হতো বনগাঁ কালিতলা পার্কে। হাজার থেকে লাখটাকা পর্যন্ত কাঁচা মালের  ডেমারেজ গুণতে হতো দুই দেশের ব্যবসায়ীদের। নষ্ট হয়েছে বহয় পণ্যের  গুনগত মান।  এখন নবান্ন থেকে নিয়ন্ত্রন হওয়া সিস্টেমে ১০হাজার টাকায় এক সপ্তাহের বুকিং নেওয়া হচ্ছে। ফলে ১থেকে ৩দিনের মধ্যে সরাসরি পন্য পৌছে যাচ্ছে বাংলাদেশে।

ওদিকে ভারতের বনগাঁ-র অদূরে কালিতলা পার্কের সাথে সংশ্লিষ্ট সিন্ডেকেটবাজরা  ট্রাক মালিকদের কাছ থেকে  অতিরিক্ত টাকা আদায় থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আন্দোলনের নামে অহেতুক গন্দগোল করে বন্দরের  বানিজ্যকে ব্যাহত করার অপচেস্টা চালাচ্ছেন, এমনটাই অভিযোগ দুদেশের বন্দর ব্যবসায়দের। এদের এই ঘৃণ্যতৎপরতাকে প্রতিহত করার জন্য সরকারী ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে ভূক্তভুগিরা দাবী জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান গত ১০ বছর যাবৎ বাংলাদেশের প্রতিটি আমদানিকারক ঋণপত্র খোলার সময় পণ্যের মূল্যের সাথে বনগাঁ, কালিতলাপার্কিং এর ৩০-৩৫ দিনের ট্রাক ডিটেনশন চার্জ ও  পণ্যবাহি ট্রাক চার্জ উল্লেখ করে তার উপর আমদানিকারককে শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। গত এক দশক ধরে প্রতি বছর কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকা পণ্যের মূল্য ও ট্রাক ভাড়া ছাড়া শুধুমাত্র কালিতলা পার্কিং ডিটেনশন চার্জ বাবদ দেওয়া হয়েছে উক্ত পরিমান টাকা।

সম্প্রতি কেন্দ্রিয় সরকারের সদ্বিচ্ছায় ও মাননীয় মূখ্য মন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের  উদ্যেগে বনগাঁ, কালিতলা পার্কিং সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়। দিল্লি বোম্বে সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে একটি ট্রাক আসার পর লোকাল গোডাউনে আনলোড করে রাখা হয়। পরবর্তীতে সেই একই পণ্য দুইটি ট্রাকে লোড করে বেনাপোলে পাঠানো হয় যা ঋণ পত্রের শর্ত বহির্ভূত। এলসি তে পার্টশিপমেন্ট অনুমোদন থাকলেও ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে।  এর আগে বনগাঁ পার্কিং সিন্ডিকেট ট্রাকের ভুয়া নম্বর দিয়ে এন্ট্রি করে রাখা হতো। পরবর্তীতে সেই সিরিয়াল নাম্বর পঞ্চাশ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। সম্প্রতি বিভিন্ন পণ্যের ইনভয়েজের মূল্যের সাথে কত মালবাহি ট্রাকের চার্জ উল্লেখ করা হয়েছে তা বিশ্লেষণে জানা য়ায়, একটি  গ্লোস ইন্ড্রাস্টি্র কর্তৃক আমদানিকৃত কেমিক্যাল ব্রীক্স ৪ টি ট্রাকে আমদানি হয়েছে। সেখানে ডিটেনশনহ সহ মালবাহি চার্জ উল্লেখ আছে ৮,০০০ ডলার অর্থাৎ একটি ট্রাকের ভাড়া ও  ডিটেনশন চার্জ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে এক লক্ষ একাশি হাজার টাকা। এই ভাড়া পণ্যের মূল্যের সাথে সংযোগ করে শুল্ক পরিশোধ করা হয়। একটি ঔষধ শিল্পের ২ টন পণ্য আমদানি হয়েছে যার ডিটেনশনসহ মালবাহি চার্জ উল্লেখ আছে ৩,১০০ ডলার অর্থাৎ একটি ট্রাকের ভাড়া দুই লক্ষ উনসত্তর হাজার টাকা। একটি ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠানের নামে ১২০ টি কেমিক্যাল চালান একটি ট্রাকযোগে আমদানি হয়েছে। যার ডিটেনশন সহ মালবাহি চার্জ উল্লেখ আছে ৩,২০০ ডলার। অর্থাৎ একটি ট্রাকের ভাড়া দুই লক্ষ সাতাত্তর হাজার পাঁচশত টাকা। ভারতের যেকোন প্রদেশ হতে বেনাপোলে পণ্য আসলে সাধারনত ডিটেনশন ছাড়া ভাড়া হয় দেড় লক্ষ টাকা। কি পরিমান দুর্নীতি করতো তারা ভাবা যায়?

এখন  পশ্চিম বাংলা সরকারের পরিবহন দপ্তর অনলাইনে ‘স্লট বুকিং’ চালু করায় ভারতের যেকোন প্রদেশ হতে ট্রাক কোলকাতায় এসে পৌছানোর পর ১-২ দিনের মধ্যে বেনাপোলে পৌছে যাচ্ছে। ফলে খুশি ব্যাবসায়িরা।এ বিষয়ে উভয় দিক সরকারী কর্মকর্তারগণ বিশেষ করে ভারতীয় পরিবহন দপ্তর, বন্দর কাস্টমস এবং বেনাপোল কাস্টমস্ ও পোর্ট এলপিআই নিয়মিত তদারকি

করলে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশে বনগাঁ পার্কিং সিন্ডিকেটের ডিটেনশন হতে চিরতরে মুক্তি পাবে এবং এতে করে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী  তথা সাধারণ  ক্রেতারা উপকৃত হবে বলে আশা করেন তিনি।

ভারতের পেট্টাপোলে স্টাফ এসোসিয়েশনের সভাপতি কাত্তিক চক্রবর্তী জানান,  কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তারা,  তবে উভয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে  বিষয়টি সমন্বয়ের পক্ষে মত প্রকাশ করেন কার্তিক।

বেনাপোল বন্দর উপপরিচালক মামুন কবির তরফদার বলেন, আমদানি রফতানি বানিজ্যে গতি ও স্বচ্ছতা ফেরানোসহ সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে আন্তরিক তারা। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নতুন সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশী পণ্য আমদানি রফতানির সাতে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা অনেক উপকৃত হবে ।

সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান ,  এই নতুন ব্যবস্থার পর বেনাপোলে বাড়ছে আনদানি রফতানি। কমছে জটিলতা, তবে এই মূহুর্তে উভয় বন্দরে জায়গা ও ইকুপমেন্ট বৃদ্ধির দাবী জানান দুই দেশের সরকারের নিকট দাবী জানিয়েছেন  তিনি।