গোফরান পলাশ, বাংলাদেশ থেকে

গতবছর বাংলাদেশে দুর্গাপূজা মন্ডপে হামলা হয়েছিল। ঘটনাবহুল সেই ভয়াবহ সহিংসতার স্মৃতি দেশটির সখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভুলতে পারছেনা এখনও। সেই ভয়ের আবহে এ বছর শেখ হাসিনা সরকারের নেয়া কড়া প্রশাসনিক পদক্ষেপে বাংলাদেশে দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা সম্প্রীতির বাতাবরণে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় এ বারের দুর্গোৎসব।

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আর আন্দময় পরিবেশে টানা পাঁচদিনের দুর্গোৎসব মঙ্গলবার দশমীর দেবীবরণের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশে দুর্গোৎসবের ইতিহাস মূলত: শহর কেন্দ্রিক। শহর থেকে এর সূচনা হলেও তা পরবর্তীতে গ্রামবাংলা জুড়ে তার ব্যাপক বিস্তার ঘটে। এক সময় দেশের জমিদার বাড়িগুলিতে দুর্গাপূজা একছত্র থাকলেও ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বজনীন বারোয়ারি পূজো রূপে। দুর্গাপূজোর আসল প্রাণটা কিন্তু থাকে গ্রামবাংলার উৎসবের মধ্যে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।\চলতি বছর বাংলাদেশে ৩২ হাজার ২’শ-র মতো মণ্ডপে দুর্গাপুজো হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ৩০টি বেশি। এর মধ্যে ঢাকায় পুজোমণ্ডপের সংখ্যা ২৪৫টি। গত বছরের তুলনায় চারটি বেশি। তবে প্রতি বছরই ঢাকায় পুজোমণ্ডপের সংখ্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশের রাজশাহীতে প্রথম দুর্গাপূজোর প্রচলন হয়েছিল। তবে এখানে প্রথম কবে দুর্গাপূজো শুরু হয়, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকার লালবাগ থানার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজোও বেশ প্রাচীন। উল্লেখ্য, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজিতা দুর্গার আরেক রূপ দেবী ঢাকেশ্বরীর নামেই ঢাকার নামকরণ হয় বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করে থাকেন। আবার কারও কারও মতে, পঞ্চদশ শতকে শ্রীহট্টের (বর্তমান সিলেট) রাজা গণেশ প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে কিছু জানা যায়নি। বিভিন্ন গবেষকের লেখা থেকে জানা যায়, ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহীর তাহেরপুর এলাকার রাজা কংস নারায়ণ প্রথম দুর্গাপুজোর প্রবর্তন করেন। রাজা কংস নারায়ণ ছিলেন বাংলার বারো ভূঁইঞার এক ভূঁইঞা।

বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বগুরা, দিনাজপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা খুলনা, যশোর, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা ছাড়াও অন্যান্য জেলাগুলোর গ্রামঞ্চলে সর্বত্র দুর্গাপূজা বিস্তৃত ছিল।

সেই দুর্গাপূজার ধারাবাহিকতায় এ বারও  বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গার আরাধনা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে শেষ হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গা পূজা উৎসব। পূজা শেষ হলেও এখনও যেন লেগে আছে রেস, উৎসবের আমেজ।

এবার দুর্গা উৎসবে যোগ দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমটির সদস্য ও  পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো: মহিব্বুর রহমান মহিব। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার দুর্গোৎসবকে প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার লালিত স্লোগান ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশে’-র মুল আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে সাথে নিয়ে পূজো শুরু হওয়ার আগে থেকে টানা একসপ্তাহ এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। উৎসবের দিন গুলোতে তিঁনি তাঁর নির্বাচনী এলাকা কলাপাড়া-রাঙ্গাবালীর ২৪টি পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন সহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সদা সজাগ ও সচেষ্ট রেখে। একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি তথা আইনসভার সদসা হিসেবে সর্বত্র তাঁর নজরদারীর কারণে দেশটির দক্ষিনাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় অত্যান্ত নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম দুর্গোৎসব।শুধু তাই নয়, তিনি প্রতিটি পূজা মন্ডপের আয়োজক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছেন  যথাক্রমে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান। নগদ অর্থ  সহায়তা প্রদান ছাড়াও কলাপাড়ার মদন মোহন সেবাশ্রম, চিংগুড়িয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, বাদুরতলি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, মহিপুর সার্বজনীন দুর্গা ও কালি মন্দির, কুয়াকাটা রাধা কৃষ্ন  মন্দির, উত্তর পশ্চিম চালিতাবুনিয়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী কালি মন্দির উন্নয়নে ৩ লাখ টাকা করে সংসদ সদস্যের বরাদ্দ থেকে অনুদান দিয়েছেন তিঁনি। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল মানুষের কাছে তিঁনি হয়ে উঠেছেন জনপ্রিয় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব  হিসেবে। তাঁর মত একজন অসাম্প্রদায়িক জন প্রতিনিধিকে তাদের সেবা করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি।  তাদের পক্ষথেকে এমনই  মতামত ব্যক্ত করেছেন কলাপাড়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন হাওলাদার।

এর আগে দুর্গা উৎসবকে ঘিরে রাতে রঙ্গিন আলোতে সেজে ওঠে  শহর ও গ্রামের সড়কগুলোর দুই ধার।   প্রতিটি মন্ডপের প্রবেশ পথে নির্মাণ করা হয় আকর্ষণীয় তোরণ। মন্ডপ থেকে ভেসে আসে ঢাকের বাদ্য, ধুপ-ধূনোর দেবময়  ধোঁয়া, শঙ্খ আর উলুধ্বনি।  চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ। পটুয়াখালীর কলাপাড়া-রাঙ্গাবালীর প্রতিটি পূজা মণ্ডপগুলোতেই  ছিল একই চিত্র। সঙ্গে ছিল  নাচ-গান-আরতি আর দেবী বন্দনা। হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ এ উৎসবে মেতে ওঠে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিশু, কিশোর সহ সব বয়সী মানুষ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করতে সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো: মহিব্বুর রহমান মহিব স্থনীয় প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে প্রতিটি পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করে উৎসবকে ভাগাভাগি করে নেন হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে।

তথ্যসূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলায় এ বছর ১৮টি মণ্ডপে ও রাঙ্গাবালী উপজেলায ৬টি পূজা মন্ডপে উদযাপন করা হয় শারদীয় দুর্গা উৎসব। রাঙ্গাবালীর পূজা মন্ডপগুলোতে যোগ দেন উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক তথা এমপি পত্নী অধ্যক্ষা ফাতেমা আক্তার রেখা। সেখানেও এমপি’র পক্ষথেকে আয়োজক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন  যথাক্রমে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা।

উপরোক্ত আনুদান ছাড়াও এলাকায় তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দের মন্দিরগুলির  কাজ চলমান রয়েছে।  চিংগুরিয়া মন্দির কে দশ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বরাদ্দের বাইরে অতিরিক্ত  আরও এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন  সাংসদ মহিব্বুর রহমান।

তা ছাড়া এমপি-পত্নী সাংসদের পক্ষে রাঙ্গাবালী উপজেলার ছয়টি মন্দিরকে ধর্মীয় উৎসব পালনের জন্য ৬টি মন্দিরকে  দশ হাজার টাকা করে মোট ষাট হাজার টাকা দিয়েছেন। কলাপাড়া জগন্নাথ আখরাবাড়ি মন্দির কে অতিরিক্ত আরও দশ হাজার টাকা দেয়া হয়।।  এ ছাড়া চিংগুরিয়া মন্দির সংস্কারের জন্য  দশ বান্ডিল টিন ও  ত্রিশ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা অচিরেই হস্তান্তর করা হবে।

এমপি মহিব্বুর রহমান সব ধর্মের উপাসনালয় সংস্কার ও উৎসব পালনের জন্য তার টার্মে তথা পাঁচবছর সমানভাবে আর্থিক অনুদান দিয়ে এসেছেন।এই জন্য এমপি মহিব্বুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাঙ্গাবালীর হিন্দু   সম্প্রদায়ের মানুষ।সাংসদের পরিকল্পনায় এ বছর আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রতিটি পূজা মন্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়।  নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া সাদা পোষাকে মোতায়েন ছিল গোয়েন্দা পুলিশ।

কলাপাড়া পৌর শহরের চিংগরিয়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীলিপ হাওলাদার বলেন, ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হয় শারদীয় এ উৎসব।

মন্দিরের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাথুরাম ভৌমিক বলেন, জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির পক্ষথেকে পাঁচদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে স্থানীয় ও বিভিন্ন অঞ্চলের  শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করে।

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন হাওলাদার জানান,  কলাপাড়া উপজেলার ১৮টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক থাকায় উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আনন্দময়তায শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবে যোগ দেয়।

কলকাপড়ার জগন্নাথ মন্দির পরিদর্শনে এসে স্থানীয় সাংসদ অধ্যক্ষ মো: মহিব্বুর রহমান মহিব বলেন,  ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশ রত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি প্রতিটি পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করে তাদের উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করতে আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আর্থিক অনুদান দে্ই।   এছাড়া  আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মন্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দে্ই ।’

অধ্যক্ষ মহিব আরও বলেন, ‘ আমি এমপি হওয়ার পর এ জনপদের সকল নদী, খাল, স্লুইজ, কালভার্ট কৃষকে    র জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, শালিশ বানিজ্য-র কবলমুক্ত করেছি এ জনপদকে। দলকে সুসংগঠিত করে দলের অস্বচ্ছল, অসুস্থ ও   পীড়িত নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। করোনাকালে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, কখনও ভ্যানে করে, কখনও ডিঙি নৌকায় চড়ে দুর্গম এলাকায় কাঁদা পানি ভেঙ্গে দু:স্থ মানুষের বাড়ী বাড়ী  তাদের খাদ্য সহায়তা পৌঁঁছে দিয়েছি।   আমার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিবছর দরিদ্র পরিবারের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, তাদের স্বাবলম্বী করতে অর্থের যোগান দিয়ে আসছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, টেকনিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ স্বাস্থ্য সেবার লক্ষ্যে হাসপাতাল স্থাপন করে দিয়েছে আমার পরিবার।’

অনুষ্ঠিতব্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে সাংসদপদে আপনার প্রতিদ্বন্দিতা করার ইচ্ছে আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাংসদ মহিব্বুর রহমান বলেন, আমি  গত পাঁচবছর আমার কনসট্যান্সি এলাকার সর্বত্র দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার সদাশয় নির্দেশ ও পরামর্শ অনুযায়ি নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছি, যার সুফল জনগণ পেয়েছে বলে আমি মনে করি। এই সময়কালে আমার কাজের বিচার করবে এলাকার সর্বস্তরের জনগণ। জনগণ আমাকে দ্বিতীয়বারের মত চাইলেই আমি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবো। সব কিছুই আমার জনগণের মূল্যায়নের উপর নির্ভর করছে।

জনাব মহিব বলেন, আমি আমার এলাকার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিকপর্যয়ে মাদার টেরজাসহ কয়েকটি এ্যাওয়ার্ড লাভ করেছি।এ ছাড়া আমাদের প্রতিনিধি জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে কলাপাড়া জগন্নাথ আখড়া বাড়ির মন্দির প্রাঙ্গনে দু:স্থ পরিবারের মাঝে বস্ত্রবিতরণ করা হয়।পূজা উদযাপন কমিটি ও একদা কলাপাড়ার মাটির মানুষ ঢাকা দায়রা ও বিচারিক আদালতের অতিরিক্ত পিপি সিনিয়র এডভোকেট বিমল সমদ্দারের যৌথ অর্থায়নে এই বস্ত্র বিতরণ করা হয়।