নিউজ ডেক্স

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ভারতের গোয়া রাজ্যের বিধান সভা নির্বাচন।সমুদ্র তীরবর্তী এই ছোট্ট রাজ্যটিতে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর পাখির চোখ। নির্বাচন নিয়ে সেখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ: উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে যেন এক ধরণের  প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুস জয়ের পর মমতা ঘোষণা করেছিলেন দেশের সবগুলো রাজ্যে তৃণমূল তাদের দলকে শক্তিশালী করবে। সে সূত্র ধরেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে গোয়া দখল করতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। এই উদ্দেশ্যে আগামী ২৮ অক্টোবর  ৪ দিনের সফরে গোয়া যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীর সফরের আগেই  গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো ও দুই  বিখ্যাত ফুটবল তারকাকে দলে টেনে আটঘাট বেঁধেই ময়দানে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর তৃণমূলের এই  তৎপরতায় বিজেপিকে দস্তুরমত চিন্তায় ফেলেছে। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের গোয়া সফরের ঘোষণার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সক্রিয় হলেন।

প্রসঙ্গত: পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে এবার তৃণমূলকে পরাসচ্ত করে বাংলা দখলের জন্য সমস্ত শক্ত নিয়ে ঝাঁপিয়েছিল বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় স্তরে প্রায় সব তাবড় নেতারা বাংলায় এসে  বিধানসভা নির্বাচনে সর্ব শক্তি দিয়ে  প্রচার করেছেন। এককথায় এই ভোট যুদ্ধ ছিল ছিল মূলত: মোদী বনাম মমতার লড়াই। কিন্তু বাংলার মানুষ তাদেরকে এমনভাবে প্রত্যাখান করেছে বাংলায় তাদের আর দেখা মেলেনি, এমনটাই বলেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।

এবার যে রাজ্যে তৃণমূলের কোনও শিকড়ই নেই সেই গোয়াতে তৃণমূলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এককথায় গোয়ায় তৃণমূলের ময়দানে নামাকে কোনওভাবেই খাটো করে দেখছে না বিজেপি। বলা যাতে পারে পশ্চিমবঙ্গের মতো গোয়ায়-ও হবে  মমতা বনাম মোদীর লড়াই।

২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচন হবে। সেই লক্ষ্যেই সেই রাজ্যের ক্ষমতা দখলের জন্য সেখানকার সব বিরোধী দল, ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনকে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।

এদিকে তৃণমূলের এই তৎপরতায়  শনিবার ‘আত্মনির্ভর ভারত স্বয়ংসম্পূর্ণ গোয়া’-নামক অনুষ্ঠানে রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে সরব হলেন নরেন্দ্র মোদী। অনুষ্ঠানে সেখানকার বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়া শুধু পর্যটন রাজ্য-ই নয়, উন্নয়নও গোয়ার অন্য নাম। উন্নয়নের মডেল এখন গোয়া। গত দেড় থেকে দুই বছর গোয়া শুধু অতিমারীতেই ভোগেনি, পাশাপাশি একাধিক সাইক্লোন ও বন্যার মুখোমুখি হয়েছে রাজ্যটি। গোয়ার পর্যটন শিল্প টানা মন্দার মধ্যেও রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার  বিভিন্ন ভাবে রাজ্যের পাশে-ই শুধু থাকেনি সেখানকার সমস্যা সমধানের জন্য ‘টেকসই রূপ রেখা’ তৈরী করেছে বিজেপি সরকার। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, উন্নত গ্রামীণ জীবনের পাশাপাশি গোয়ার রয়েছে এক সমৃদ্ধময় শহুরে জীবন। তার সঙ্গে রয়েছে কৃষি ও সবুজ অর্থনীতির সুয়োগ। আত্মনির্ভর ভারতের এক অংশ হওয়ার জন্যে গোয়ার যা প্রয়োজন তার সবই রয়েছে গোয়ার। কেন্দ্রের অধিকাংশ প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে কার্যকর করা হয়েছে গোয়ায়। রাজ্যের গ্রামীণ পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে গোয়ার জন্য বরাদ্দ গত বারের তুলনায় ৫ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, তৃণমূল সূত্রে জানা যায়,  আাগামী ২৮ অক্টোবর গোয়া যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চারদিনের গোয়া সফরের আগে সেখানকার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সব বিরোধী দল, ব্যক্তি ও সংগঠনকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। গোয়ায় একাধিক দলীয় কর্মসূচি রয়েছে মমতার। সেখানকার বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, মমতার উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কংগ্রেস সহ একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতার।  তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ছাড়াও সেখানে যোগ দিতে পারেন একাধিক  বিশিষ্টজনেরা। ইতিমধ্যেই, গোয়ায় কাজ শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা, আইপ্যাকের প্রতিনিধিরা, এমনটাই জানায় তৃণমূল সূত্র।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা লুইজিনহো ফেলেইরো তৃণমূলে যোগ দেয়ার পর  তাকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি পদে নিয়োগ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেলেইরোর পাশাপাশি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন গোয়ার দুই ফুটবল তারকা ডেনজিল ফ্রাঙ্কো ও লেনি ডি গামা। এর পাশাপাশি মমতার গোয়া সফরের সময়ে রাজ্যের আরও বিশিষ্টজন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

মমতার গোয়া সফরসূচি ঘোষণার পরই  দলের তরফে নরেন্দ্র মোদীর নামে এক টুইট করে বলা হয়েছে, গোয়ায় ফুটবল নিয়ে উন্মাদন অন্যরকম। নতুন উদ্যেমে ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করবে গোয়া।  এই সফরের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, গত ১০ বছর ধরে অনেক কষ্ট করেছেন গোয়ার মানুষ। সকলে একজোট হলে গোয়ায় নতুন সরকার গঠন সম্ভব। নতুন সরকার  এসে গোয়ায় এক নতুন সকাল নিশ্চিত এনে দেবে জনগণেরর জন্য। এই জন্য গোয়া রাজ্যবাসীর পাশে সবসময় পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার যে সমস্ত জনপ্রিয় কর্মসুচী সুবিধা দিয়েছে গোয়ায়-ও সেই সব প্রকল্প-কর্মসূচী চালু করা হবে। গোয়ার জনগণের সরকার হবে এবং তাদের সমস্ত দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে তৃণমূল।