দিব্যেন্দু গোস্বামী, বীরভূম থেকে

আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব রীতিনীতি মেনেই  শুক্লাপক্ষের একাদশীর দিন করম পূজার মাধ্যমে মাতলেন  বীরভূমের সমস্ত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ । এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকে আদিবাসী সম্প্রদায়। প্রায় ৩০ টির বেশি শাখা সংগঠন এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে যার নাম করমচাঁদ পূজা।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের যেমন মারাংবুরু পুজো করা হয় সেই রকম ভাবেই করমচাঁদ পূজার মাধ্যমে দেবতাকে তুষ্ট করা হয়। করম গাছের ডাল এদিন পূজিত হয়। করম পূজার রীতি অনুযায়ী আদিবাসী সম্প্রদায়ের যিনি পুরোহিত তিনি করম গাছের ডাল মাটিতে পুঁতে করমচাঁদ দেবতাকে তুষ্ট করতে  হয় । মূলত সাঁওতাল ,কোরা, মুন্ডা, ওরাও প্রভৃতি মানুষজন এই করমচাঁদ পূজায় অংশগ্রহণ করে।

করমচাঁদ পূজাকে কেন্দ্র করে আদিবাসীরা নাচ গানের মাধ্যমে করমচাঁদ দেবতাকে পুজো করে । দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য চলে সারাদিনব্যাপী অনুষ্ঠান। ধামসা মাদল বাজিয়ে পুরুষেরা মহিলাদেরকে উৎসাহ প্রদান করে । এরপরই যেখানে পূজোর বেদি স্থাপন করা হয় সেখানে চারিদিক ঘিরে কুমারী মেয়েরা দেবতাকে তুষ্ট করার জন্যই তারা গান বাঁধেন । শুধু এখানেই নয়, করমচাঁদ ঠাকুর কে তুষ্ট করার জন্য ডালি সাজিয়ে দেবতাকে অর্ঘ্য নিবেদন করে। যার মধ্যে থাকে আতপ চাল ,ধুপ ,ধুনো আখের গুড় আর সঙ্গে থাকে করম গাছের পাতা।

বীরভূম সহ রাজ্যের প্রতিটি কোনায় যেখানে আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে সেখানেই তারা এই করমচাঁদ ঠাকুর কে পুজো দেন। এবছর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ধান দিয়ে যে তারা দেবতাকে তুষ্ট করবেন তারও উপায় নেই । তাই তারা এ বছর ধান বাদ দিয়েই করমচাঁদ ঠাকুরকে নিবেদন করে। বীরভূমের মোহাম্মদ বাজার,হরিনসিংগা শালবনী ,রাজনগর, রামপুরহাট ,নলহাটি প্রভৃতি এলাকার মহিলারা করমচাঁদ কে পুজো  দেয়। পুজোর পর তারা করম ডাল যেখানে পোতা হয় সেখানে প্রদক্ষিণ করে তারা ।তাদের এই উৎসবে  নিমন্ত্রণ করা হয় স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের। তারাও নাচে অংশগ্রহণ করে। পাশাপাশি আর্থিক সাহায্য করা হয় আদিবাসীদেরকে । কাজেই বীরভূম জেলার দুর্গাপুজোর আগেই আদিবাসীদের এই উৎসব এক মহৎ উৎসব হিসাবে পালিত হয়ে আসছে  এক মহৎ উৎসব হিসাবে।