এম এ রহিম, বাংলাদেশ থেকে

বিশ্বের অন্যতম খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী দেশ ভারত। প্রথিবীর ১৫০টির বেশী দেশে চাল রফতানি করে থাকে দেশটি। ইউক্রেন যুদ্ধ,  ভারতে খাদ্যশষ্য উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রদেশে কম বৃষ্টিপাতের কারণে ধান উৎপাদন কমতে পারে এই আশঙ্কায় ভারতের অভ্যন্তরীন বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে চাল রফতানিতে  ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ভারতের অর্থ মন্ত্রনালয়। তবে বন্ধ প্রতিম রাষ্ট্র ভারত সিদ্ধ ও সুগন্ধি বাশমতি  চাল রাফতানি আগের নিয়মে হবে। ১৫সেপ্টম্বর পর্যন্ত পূর্বের এলসিকৃত চাল পাবে বাংলাদেশ। তবে চালের খুদ ও ভাঙ্গা চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকবে। চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে তৎপর হয়েছে বাংলাদেশের সরকার। ওএমএস বা স্বল্পমুলের চাল বিতরন দ্বিগুন করেছে। আগামী  ডিসেম্বর পর্যন্ত চাল আমদানি শুল্ক ৬২.২৫ ‍শতাংশ থেকে

বাংলাদেশ ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান ও বেনাপোল বন্দর পরিদর্শক পলাশ সরকার বলেন,ভারত থেকে মোটা স্বর্না প্রতিটন ৩৯৫ ডলার ও মিনিকেট চিকন বা সরু ৫৮০ ডলারে আমদানি করা হচ্ছে। বৃহস্পতি ও শনিবার গত ২দিনে ভারত থেকে ৯শ মে:টন চাল বন্দরে প্রবেশ করেছে। ভোমরা স্থলবন্দর দিয়েও আসছে চাল।

ভারত চাল রপ্তানিতে২০শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশে চালের বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। তবে ইতিমধ্যে সরকার ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত নেওয়ায় চালের বাজার রয়েছে স্বাভাবিক।

ভারত নিজেদের মজুত বাড়াতে ও বাজার স্বাভাবিক রাখতে বৃহস্পতিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপননে শুক্রবার থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকরে নির্দেশনা জারি করে। ভারতের ধান উৎপাদনকারী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশের চাল আমদানির প্রধান উৎস দেশ ভারত।কারণ সড়কপথে অল্প পরিবহন খরচে স্বল্প সময়ে চাল দেশে আনা যায়। চিন ও পাকিস্থান চাল রফতানি কমিয়ে দিয়েছে।যা সামগ্রিকভাবে চাল আমদানিতে বিপাকে ফেলছে বাংলাদেশকে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু খাদ্যপণ্য রপ্তানির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে ভারত সরকার। এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন সমকালকে বলেন, ভারত থেকে জি টু জি পদ্ধতিতে১লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বৃহস্পতিবার আরও ৫০হাজার টনের টেন্ডার হয়েছে। ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে সরকারি পর্যায়ে এই দেড় লাখ টন চাল আমদানি অনিশ্চয়তায় পড়ল।বেসরকারি খাতে আমদানিতে খরচ বাড়বে নিরুৎসাহিত হবে ব্যাবসায়িরা।সরকার মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকে চাল আমদানিতে যোগাযোগ করছে।বেসরকারিভাবেও আমদানি সহজের পরিকল্পনা রয়েছে।এ বছর বাংলাদেশেও ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। আবার বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ফলে কিছুটা বাড়ে চালের দাম।  তবে বর্তমানে চালের দাম রয়েছে স্বাভাবিক।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার নিজে এবং বেসরকারি খাতের মাধ্যমে চাল আমদানির চেষ্টা করছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালের আমদানি বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। খাদ্য মন্ত্রণালয় আমদানির উদ্যোগও নিয়েছে। গত ৩১ আগস্ট সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ভারত থেকে ১ লাখ টন এবং ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। গত বুধবার অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে মিয়ানমার থেকে ২ লাখ টন আতপ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি খাতে সারাদেশের প্রায় ৪০০প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। এরই মধ্যে বেসরকারি খাতে কিছু চাল আমদানিও হয়েছে, যার সিংহভাগ এসেছে ভারত থেকে।একই সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে আমদানির উদ্দেশ্যে এলসি খুলেছে। ভারতের এ সিদ্ধান্তের ফলে আগে এলসি খোলা চালে এই শুল্ক আরোপ হবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আমদানিকারকরা।