এম এ রহিম, বাংলাদেশ থেকে

ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুট ব্যবহার করে কলকাতা থেকে পণ্য পৌঁছে যাবে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে।
বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্রানজিট চুক্তির আওতায় আরো একটি পরীক্ষামূলক কনটেইনার চালান এমভি ট্রান্স সমুদেরা’ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে।
শনিবার কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্দর (এসপিএম) থেকে বাংলাদেশের ট্রানজিট ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে পণ্যবাহী জাহাজের আনুষ্ঠানিক ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে। এদিন একটি কার্গো জাহাজ উত্তর-পূর্ব ভারতের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর ফলে কেবল অর্থ বা সময়ই বাঁচবে না, দুই দেশের অর্থনীতিরও ব্যাপক অগ্রগতি হবে।
পতাকা নাড়িয়ে এদিন ট্রায়াল রানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন এসপিএম’র চেয়ারম্যান বিনীত কুমার। ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুট ব্যবহার করে তৃতীয়বারের জন্য এই ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে।
চিকেন নেকের বাইরে এই বিকল্প রুট চালু হলে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে পণ্য আদান প্রদান যেমন সহজ হবে তেমনি এর পাশাপাশি কলকাতা থেকে এবং বাংলাদেশ হয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেও পণ্য আদান প্রদান অনেক সহজ ও নিরাপদ হবে বলেও মনে করেন বিনীত কুমার।বন্দরে জাহাজ আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ম্যাংগো শিপিং লাইনের ম্যানেজার হাবিবুর রহমান। এর ফলে বেশী উপকৃত হবে বাংলাদেশ। পৌছে যাওয়া মালামাল সড়ক পথে ছুটবে গন্তব্যস্থলে। এর জন্য বাংলাদের ট্রাক ব্যাবহার করতে হবে। এতে করে বাংলাদেশের বাড়তি আয় সৃষ্টি হবে, হবে কর্ম সংস্থানের। হাইকমিশন সূত্র জানায়, চুক্তির অধীনে পণ্য পরিবহনের জন্য আটটি অনুমোদিত রুট রয়েছ যেমন, , চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলা, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে তামাবিল হয়ে ডাউকি, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে শেওলা হয়ে সুতারকান্দি, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে বিবিরবাজার হয়ে শ্রীমন্তপুর এবং এর বিপরীতে চারটি রুটে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় চুক্তিটি কার্যকর করার জন্য একটি এসওপি সই হয়েছিল।
এ চুক্তির অধীনে চট্টগ্রাম-আখাউড়া-আগরতলা রুটে প্রথম ট্রায়াল রান ২০২০ সালের জুলাই মাসে সফলভাবে পরিচালিত হয়েছিল যেখানে চারটি কন্টেইনার, দুটি টিএমটি স্টিল এবং শস্যদানা, কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে আইসিপি আগরতলায় পাঠানো হয়েছিল।
এখন বন্দর থেকে মঙ্গলবার আসা কনটেইনারগুলো বের করার জন্য কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। পরে এগুলো সড়কপথে ভারতে পাঠানো হবে। এদিকে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনও এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজটি পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।হাইকমিশন সূত্র জানায়, কার্গোর এ চলাচল ২০১৮ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করার চুক্তিটি কার্যকর করার জন্য গৃহীত ট্রায়াল রানের অংশ। এ ট্রায়াল রান চট্টগ্রাম-শেওলা-সুতারকান্দি রুটে টাটা স্টিল এবং সিজে ডার্কল লজিস্টিকস লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।
আগামী কিছু দিনের মধ্যে ডাউকি-তামাবিল-চট্টগ্রাম রুটে একটি ট্রায়াল রান পরিচালনা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা এই চুক্তির অধীনে অনুমোদিত সমস্ত রুটে ট্রায়াল রান পরিচালনার সমাপ্তি নির্দেশ করবে। চলতি বছরের শুরুর দিকে দুই সরকারের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে, সে অনুযায়ী এ চুক্তির অধীনে পণ্যের পরিচালনা এবং নিয়মিত চলাচলের জন্য এ ট্রায়াল রানসমূহ পরিচালনা সমাপ্তির পরে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় স্থায়ী আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি জারি করবে।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র আরও জানায়, এ চুক্তির অধীনে পণ্যের ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের খরচ এবং সময় উভয়ই কমিয়ে দেবে। এটি বাংলাদেশের লজিস্টিকস এবং সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির (বিমা, পরিবহন ও ফিন্যান্স ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি) জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভ হবে। কারণ, পণ্য ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য শুধুমাত্র বাংলাদেশের ট্রাক ব্যবহার করা হবে।