নতুন দিল্লি ৭ জানুয়ারী : জেনেভাতে বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনে বুধবার থেকে ভারতের সপ্তম বাণিজ্য নীতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক শুরু হয়েছে। সংগঠনের নজরদারিমূলক কাজকর্মের প্রেক্ষিতে এ ধরনের পর্যালোচনা বৈঠকের অত্যন্ত তাৎপর্য রয়েছে। সংগঠনের সদস্য দেশগুলির জাতীয় বাণিজ্যিক নীতির এক সুসংবদ্ধ আগাগোড়া পর্যালোচনার এক আন্তর্জাতিক মঞ্চ বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন। ভারতের বাণিজ্য নীতি নিয়ে শেষ পর্যালোচনা বৈঠক ২০১৫’তে অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনে ভারতের এবারের বাণিজ্য নীতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে আধিকারিক পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন বাণিজ্য সচিব ডঃ অনুপ ওয়াধাওয়ান। পর্যালোচনা বৈঠকের প্রারম্ভে সংগঠনের সদস্যদের উদ্দেশে বাণিজ্য সচিব জোর দিয়ে বলেন, এমন সময় এই পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সমগ্র বিশ্ব অভাবনীয় স্বাস্থ্য ও আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখী। স্বাস্থ্য ও আর্থিক ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারীর দরুণ উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলায় ভারতের নিবিড় প্রয়াসগুলির কথা উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব বলেন, এই সঙ্কট মোকাবিলায় ভারত সরকার আত্মনির্ভর ভারত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
ডঃ ওয়াধাওয়ান সকলের জন্য সুলভে টিকা এবং কোভিড চিকিৎসা প্রদানের বিষয়ে ভারতের অঙ্গীকারের কথা পুনরায় উল্লেখ করে বলেন, বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা সুলভে এ ধরনের পরিষেবা পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব অনতিবিলম্বে মোকাবিলায় ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনে এক স্বল্প মেয়াদী প্যাকেজের ব্যাপারে জোরালো সওয়াল করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি, কোভিড-১৯ এ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, নমুনা পরীক্ষা এবং সুলভে টিকার সময় মতো যোগানের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব জোর দিয়ে বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনে গত ৫ বছরে ভারতের সর্বশেষ বাণিজ্য নীতি পর্যালোচনার সময় থেকে সরকার বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সংস্কারে এবং অনুকূল অর্থ ব্যবস্থার প্রসারে নিরন্তর কাজ করেছে, যাতে ১০০ কোটিরও বেশি ভারতীয়র আর্থ-সামাজিক প্রত্যাশা পূরণ করা যায়। এই লক্ষ্যে ভারত সরকার পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি), ঋণ পরিশোধে ক্ষমতা ও দেউলিয়া বিধি, শ্রম ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সংস্কার, বিনিয়োগ-বান্ধব প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নীতি, মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচি, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া এবং স্কিল ইন্ডিয়ার মতো একাধিক কর্মসূচি চালু করেছে। এই কর্মসূচিগুলি চালু করার উদ্দেশ্যই হ’ল আর্থিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এক অনুকূল বাতাবরণ গড়ে তোলা। সরকারের এই পদক্ষেপগুলির ফলেই বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সংক্রান্ত ক্রমতালিকায় ভারত ২০১৫’র ১৪২তম স্থান থেকে ২০১৯ সালে ৬৩তম স্থানে উঠে এসেছে। একই সঙ্গে, করোনা মহামারীর মতো কঠিন সময়কে সুযোগে পরিণত করে বার্ষিক-ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহের পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশি হারে বেড়ে ২০২০-২১ এর প্রথম ছ’মাসে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এক পরিসংখ্যান দিয়ে বাণিজ্য সচিব জানান, ২০১৯-২০’তে ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহের পরিমাণ ছিল ৭৪.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাণিজ্যিক নীতি নিয়ে এই পর্যালোচনা বৈঠক আগামীকাল পর্যন্ত চলবে। পর্যালোচনা বৈঠকে সংগঠনের সদস্যরা ভারতের বাণিজ্যিক ও আর্থিক নীতিগুলি নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনা করবেন।