প্রণব ভট্রাচার্য্য

বিক্ষিপ্ত অশান্তি, ব্যাপক বোমাবাজি, বিরোধী এজেন্টদের মারধর, বুথে তাদের বসতে না দেযা, ভূয়া ভোটার ভোটারদের উপর হামলা বুথ দখল ইত্যাদি নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে রবিবার বিধানসভা নির্বাচনের পর বাংলায় দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ লড়াই কলকাতা পুর ভোট শেষ হলো । পুরভোটকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই মহানগরে একের পর এক অশান্তি আর সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠে। অভিযোগ বিজেপি, বাম দলসহ বিরোধী দল গুলোর। নির্বাচন কমিশন জনিয়েছ বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ভোটদানের হার ছিল ৬৫.৪০ শতাংশ।

সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে সন্ত্রাসসহ নানা অভিযোগ আসতে থাকে। সকালের  দিকেই ২২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী মীনাদেবী পুরোহিতের পোশাক ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও পাল্টা  অভিযোগ করে তৃণমুল বলছে নিজেই নিজের পোশাক ছিঁড়েছেন। এরপর তার ওয়ার্ডরই অন্য বুথ থেকে দু’জন ভুয়ো ভোটার ধরেছেন বলে অভিযোগ করেন মীনাদেবী পুরোহিত।

অন্যদিকে, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে সকালেই কংগ্রেস ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তৃণমূল প্রার্থী ও কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠকের মুখোমুখি বচসা বাধে। এরপর ব্রেবোর্ন রোডের জৈন স্কুলে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। কংগ্রেস প্রার্থীর এজেন্টকে ফেলে মারধরের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। তারপর আক্রান্ত এজেন্টকেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে।

এদিকে বেলেঘাটায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে সকাল থেকেই অসান্তি আর বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। বোমা বাজী হয় শিয়ালদহের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের টাকি হাইস্কুলের সামনেও।ওই  ঘটনায় এক ভোটার গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুলিস। এদিকে একাধিক প্রার্থী ও এজেন্টদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। সন্ত্রাসের অভিযোগে বিজেপি দুপুর ১টা থেকে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সামিল হয়। বামেরাও বাঘাযতীনে অবরোধ করে। এর আগের ভোটগুলিতেও রাজ্যে নানা দিক থেকে  অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। তার অন্যথা হল না কলকাতা পুরভোটেও।

পুরভোটের শেষ লগ্নে ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী রাজর্ষি লাহিড়ীআক্রান্ত হন । রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় তাকে। সিসিটিভি ফুটেজে, মাটিতে ফেলে টেনে হিঁচড়ে রাজর্ষি লাহিড়িকে বেদম প্রহার করা হচ্ছে দেখা গেছে। ইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে  হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

কলকাতা পুর নির্বাচনে আদৌ কোন ভোট হয়নি। অবাধ ভোট লুঠ হয়েছে।রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে এমন অভিযোগ করেন বাম নেতা রবীন দেব। তিনি বলেন,  একদিকে তৃণমূল আশ্রিত গুন্ডা ও পুলিশের বাধাকে উপেক্ষা করে ‘বীরের মতো’ লড়াই করেছেন বাম কর্মীরা। যদিও ভোটের নামে প্রহসন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ভোট শুরু হওয়ার আগে থেকেই এমএলএ হস্টেলের গেটে বাইরে থেকে তালা লগিয়ে ভেতরে ১২ জন বিজেপি বিধায়ককে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের বেরতে দেওয়া  হয়নি। এমনই অভিযোগ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। তিনি এও জানান, কলকাতা আসার পথে আটকানো হয়েছে বিজেপি বিধায়কদের।

আজ দুপুরে কলকাতা পৌরনিগমের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ফের আক্রান্ত বিজেপির পোলিং এজেন্ট। সিআইটি পার্ক পোলিং স্টেশনের বিজেপি প্রার্থীর এজেন্টকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বিরোধী এজেন্টকে অন্যত্র তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছে বলে বিজেপির  অভিযোগ।  অভিযোগ, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সিআইটি পার্ক পোলিং স্টেশনে বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতী এসে তাণ্ডব চালিয়েছে। পুলিশের সামনেই বিরোধী এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী শিবির। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে বটতলা এলাকায় বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস একযোগে থানা ঘেরাও করে রাখে ।

ভোটে অশান্তির অভিযোগে তৃণমূলের বিরূদ্ধে ময়দানে নেমেছে বাম, কংগ্রেস, বিজেপি। জেলায় জেলায় পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিজেপি কর্মীরা। তবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ”বিরোধীরা নাটক করছে। মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ভোট দিয়ে বেরিয়ে অভিষেক বললেন, “অজুহাত চাই । গণতান্ত্রিক পরিবেশে মানুষ ভোট দিয়েছেন। নাটক না করে, মানুষকে বিভ্রান্ত না করে বিজেপির কাছে যদি কোন প্রমাণ থাকে জনসমক্ষে তুলে ধরুন।  তৃণমূলের কোনও নেতা কোনও ঘটনায় জড়িত কিংবা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগে আটকানো হয়েছে এমন প্রমান দিতে পারলে আমি দায়িত্ব নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বলছি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেব।”

১৪৪টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি কলকাতা পুর এলাকায় এ বার মোট ভোটার  সংখ্যা ৪০,৪৮,৩৫২। সবচেয়ে বেশি ভোটার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডে  ৯৫,০৩৮ জন ভোটার। সবচেয়ে কম ভোটার রয়েছেন ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে ভোটার সংখ্যা ১০,০৩৩। কলকাতায় ওয়ার্ড পিছু গড় ভোটার ২৮,১১৪ জন। ভোট গ্রহণের জন্য মোট ৪৯৫৯ টি বুথের ব্যবস্থা হয়েছে। এর মধ্যে ১১৩৯টি বুথকে ‘স্পর্শকাতর’ বলে চিহ্নিত করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।